সর্বশেষ:

» বায়ুদূষণ রোধে দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানে কাজ করতে হবে

বায়ুদূষণ রোধে দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানে কাজ করতে হবে

ঢাকা: বুধবার, ২০ মার্চ, সকালে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এর সেমিনার কক্ষ শিশু ও যুব ফোরামের আয়োজনে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর যৌথ সহযোগীতায় “Saving the life of elderly and young children through mitigation of air pollution and ensuring “Fresh Air for Breathing” শীর্ষক একটি অংশীজন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের সভাপতিত্বে উক্ত জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয়, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো: হায়দার আলী (যুগ্ম সচিব) এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা।

সভাপতি বক্তব্যে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বায়ু দূষণের ভয়াবহতা উল্লেখ করে বলেন, নির্মল বায়ু মানুষের অধিকার কিন্তু ঢাকা শহরের অধিবাসীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত। জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুতে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে যা বায়ুর গুণগত মান নষ্ট করছে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা গেলে সবার জন্য নির্মল বায়ু এবং জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় এমপি বলেন, “বর্তমান সরকার বিশেষ করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বায়ুদূষণ সহ সার্বিক পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যাপক কাজ করছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে সরকার পরিবেশ দূষণ ও বায়ুদূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। শুধুমাত্র পানি ছিটিয়ে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। এটি সাময়িক সমাধান আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি কার্যকরী সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে, আমাদের বায়ুদূষণের উৎস গুলোকে বন্ধ করতে হবে। বর্জ্য পুড়িয়ে যেন বায়ুদূষন না হয় সেজন্য বর্জকে সম্পদের পরিনত করতে হবে যার আর্থিক মূল্য থাকবে, ফলে মূল্যবান বর্জ্য কেউ পুড়িয়ে লোকসান করবে না।

আন্তদেশীয় বায়ুদূষণ ইস্যুতে তিনি বলেন, এটি কেউ চাইলে সহজে নিরসন করতে পারবে না, বায়ু প্রবাহ কোন বাধা মানে না এটি প্রাকৃতিক নিয়মে চলে, জিওপলিটিক্যাল দূষণগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। পরিবহনের বায়ুদূষণ কমানোর জন্য তিনি জীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক পরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেন এবং পরিবেশ বান্ধব ইলেক্ট্রিক ভিহিকল ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করেন। তিনি আরও বলেন বর্তমান সরকার ইলেক্ট্রিক ভিহিকল নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, এই খাতে ভ্যাট ট্যাক্স কমিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো: হায়দার আলী (যুগ্ম সচিব) বলেন, “আমি বিশ্বাস করি বায়ুদূষণ রোধে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ আরোও জোড়ালো করা উচিত। বায়ুদূষণ রোধের জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দ সমূহ সঠিকভাবে তদারকি করতে হবে এবং তার যথাযথ ব্যবহার ও নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ হতে রাস্তার‍ ধুলাদূষণ কমাতে প্রতিদিন ২০টি গাড়ি রাস্তায় পানি ছিটানোর কাজ করছে”।

ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা বলেন, “আমাদের এখন সব থেকে বেশি প্রয়োজন সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনবিহীন যানবাহন রাস্তায় চলাচল না করতে পারে যা বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। এ বিষয়ে কাজ করার জন্য বিআরটিএ এবং ট্রাফিক পুলিশকে সমন্বিত ভাবে কাজ কাজ করতে হবে”।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়েও বায়ু দূষণ রোধে কাজ করতে হবে। বসতবাড়ি ও কর্মস্থলের বর্জ্য সঠিক স্থানে এবং সঠিকভাবে নিষ্কাশন করতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ের উদ্যোগসমূহ সরকারি কাজকে ত্বরান্বিত করতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করবে। আমরা সবাই কাজ করবো কিন্তু নেতৃত্ব দিবে সরকার”।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর আইনজীবি এডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার বলেন, “দূষণমুক্ত জীবন নাগরিক অধিকার, সংবিধানের ১৮ক তে এই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারের পর্যাপ্ত আইন ও বিধিমালা রয়েছে, তাই মান্য করা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। সরকারের পক্ষে প্রতিজনকে ধরে ধরে আইন মান্য করানো সম্ভব নয়, জনগণকে নিজ উদ্যোগে এসব আইন সম্পর্কে জানতে হবে এবং মেনে চলতে হবে”।

পরিবেশ উদ্যোগ এর গবেষণা সমন্বয়ক ইঞ্জি. মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে বায়ু দূষণে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম স্থানে আছে, যা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়, পারিপাশ্বিক বায়ুদূষণ কমানোর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে গৃহ অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ হ্রাসের জন্য পরিবারিক পর্যায় থেকেই কাজ করার জন্য তিনি শিশু ও তরুণদের আহ্বান জানান”।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, দেশে পরিমান বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা রোধে আমাদের একটি কার্যকরী আইন প্রয়োজন, এটি রোধে বায়ুদূষণ বিধিমালা পর্যাপ্ত নয়। নির্মল বায়ু আইন যেটি পূর্বে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে তা অতিশীঘ্রই চূড়ান্ত প্রণয়নের জন্য তিনি দাবি জানান।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর ডেপুটি ডিরেক্টর- ফিল্ড প্রোগ্রাম অপারেশন মঞ্জু মারীয়া পালমা বলেন, “বায়ু দূষণের ভুক্তভোগী আমরা সবাই। তাই সরকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ সকল সমমনা সংস্থা গুলোকে একসাথে কাজ করার জন্য যথাযথ পদ্দক্ষেপ নিতে হবে”।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদা পারভীন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কয়েকটি সাবজেক্টে  বায়ুদূষণের সিলেবাস রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এটি নিয়ে মোটামুটি সচেতন হলেও শিশু কিশোররা এখনো এটি বুঝে উঠতে পারছে না। প্রাইমারী, মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে বায়ুদূষণ বিষয়টি পাঠ্যবইয়ের যুক্ত করার উপর তিনি গুরুতারোপ করেন”।